ভ্যান চালক মকলেছ মিয়া।স্বপ্ন শিক্ষিত সন্তানের বাবা হবার।
![]() |
| ভ্যান চালক মকলেছ |
গামছা দিয়ে মুখ মুছছেন আর ধির পায়ে পেডেল মারছেন মকলেছ মিয়া।একেতো প্রচন্ড গরম তার উপর খাল খন্দর রাস্তা। মাঝে মাঝে ভ্যান থেকে নেমে হাত দিয়ে ভ্যান টেনে গর্ত পার করছেন তিনি।হঠাৎ বিড়বিড়িয়ে নিজ মনে কি যেন হিসেব কসছেন মকলেছ মিয়া।“সাকালে ৭০, দুপুরোত ৩০, বিকালোত ৩০, সইন্ধাত ৪০, মোট হইল ১৭০ টাকা, দুইশোয় পুরিলনা(?)” মোকলেছ মিয়া এমনই ।প্রতিদিন ভ্যানের চাকা ঘোরান আর ঘোরান হিসেবের চাকা,সেই সাথে স্বপ্ন দেখেন ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর।না নিজের ভাগ্য নয়, সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি।তিন মেয়ে আর এক ছেলের গর্বিত জনক মোকলেছ মিয়া।বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের (পূর্ব আমবাড়ি) ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। ছেলে হাবিবুর ২০১১ সালে চিলাহাটি মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জি,পি,এ,-৫ পেয়ে বর্তমানে রংপুর কারমাইকেল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষের ছাত্র। বড় মেয়ে রুনার বিয়ে দিয়েছেন। মেজ মেয়ে নুরনেহার গোমনাতী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় ।ছোট মেয়ে রেনু আমবাড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী।
প্রতিদিন
ভাড়ার হিসেবের যোগফল সমান না হলেও মাস শেষে ছেলের জন্য ৪০০০/-টাকা পাঠানোর হিসেবটা ঠিকই মেলাতে হয় তাকে।তাছাড়া মেয়েদের পরীক্ষার ফি, বই কেনার টাকা,টিউসন ফি ইত্যাদি
তো রয়েছেই।তাই মকলেছ মিয়ার শরীরে বোধহয় কান্তি নেই।কখনও বেশী যাত্রী নিয়ে বড় দান মারার আশা তিনি করেননা। একজন দুজন যাত্রী পেলেই ধরেন হ্যান্ডেল মারেন পেডেল। মাঝে মাঝে ক্ষোভ অটো-নসিমন ওয়ালাদের
উপর।তারা রাস্তায় না থাকলে হয়তো দিন শেষে অর্জনটা বেশী হতো। আয় যাই হোক না কেন মকলেছ মিয়া ছেলেকে একটু বেশিই শোনান।শেষে প্রয়োজনের টাকাটাও যদি না চায় এমন ধারনা থেকে।ছেলেকে জানতে দেননা কোন কোন দিন ছেলেকে টাকা পাঠানোর পর চাল,তরকারী কেনার টাকাটাও অবশিষ্ট থাকেনা।তবুও তিনি ছেলেকে প্রাইভেট না পড়ানোর নির্দেশ
দিয়েছেন। তার মতে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত
প্রাইভেট পড়ালে লেখাপড়ার ক্ষতি হবে।মকলেছ মিয়ার সংকল্প মেয়ে দুটিকে স্নাতক পাশ না করিয়ে বিয়ে দিবেননা।মোকলেছ মিয়ার সব সংকল্প ও স্বপ্ন পূরন হোক এমনই প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা মকলেছ মিয়ার স্বপ্ন পূরনে হয়তো কেউ এগিয়ে আসবেন।
Category: ফিচার








0 মন্তব্য(গুলি)