বিশ্বকাপের জ্বর
গোমনাতী বাজার মহিলা বিপনী কেন্দ্র থেকে ছবিটি তোলা। |
পারদ চড়ছে চড়চড় করে, জ্বর । এই
জ্বরের থাবায় আক্রান্ত হচ্ছেন আট থেকে আশি। ওয়াকিবহাল আভাস দিচ্ছে, জ্বর বাড়লে আগামী দিনে
রাতের ঘুম থাকবে না।
একবার শুরু হলে চলবে টানা মাস ধরে। এ জ্বরের কোনো প্রতিষেধকও এখন পর্যন্ত
আবিষ্কৃত হয়নি- যার নাম ‘বিশ্বকাপ’ জ্বর।১২ জুন থেকে ফুটবলের
তীর্থভূমি ব্রাজিলে পর্দা উঠেছে ২০তম ফিফা
বিশ্বকাপের। এ জমজমাট ফুটবল আসরকে ঘিরে গোমনাতী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে ফুটবল সমর্থকদের মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা মুখর আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় আমাদের অংশগ্রহণ না থাকলেও ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসা আগামী এক মাস আমাদের অধিকাংশকে যে বুঁদ করে রাখবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিয়মানুসারে প্রতিটি খেলায়
পক্ষ-বিপক্ষ থাকে,
তাদের মাঝে প্রবল মানসিক প্রতিযোগিতা কাজ করে। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে তার প্রাবল্য অস্বীকার করার উপায় নেই; বলা যায় তা একাধারে তুলনাহীন ও আকাশছোঁয়া। কিন্তু এমন এক খেলার সর্বব্যাপী উত্তাপ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার বাস্তবতা মেনে নিয়েও এবিষয়ে কিছু প্রশ্ন না তুলে পারা যায় না।বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তব সত্য যে, ইতোপূর্বেও আমরা দেখেছি এমন খেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শক্তিশালী বিদেশি দলের এদেশীয় সমর্থকদের পছন্দের দলের জাতীয় পতাকা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র উত্তোলন করা হয় যা এগিয়ে যাওয়া খেলার মেজাজের সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘকাল ধরে প্রায় সর্বত্র উড়তে থাকে। কিন্তুএই আনন্দ বহিঃপ্রকাশের ধারাকে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া যায় না।উল্লেখ্য যে, জাতীয় পতাকাকে অবমূল্যায়ন করে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময় ভিন্ন দেশের পতাকা উড়ানো এবং দেশব্যাপী নিজ দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি চরম অবমাননা করা হয়ে থাকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত হারানোর পর অর্জিত এ পতাকা। অথচ সে পতাকাকে ফুটবল খেলাকে ঘিরে বর্তমানে যত্রতত্র স্থানে অসম্মান, অশ্রদ্ধা ও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। জাতীয় পতাকা সাধারণ এক টুকরা কাপড় নয় তা সে যে দেশেরই হোক না কেন। বিশ্বসভায় তার একটি স্বতন্ত্র সত্তা, পরিচিতি ও মর্যাদা রয়েছে এবং সভ্য সমাজের রীতি অনুসারে ঐ দেশসহ অপর যেকোন দেশ বা তার নাগরিক কর্তৃক তা যথাযোগ্য সম্মানিত অবস্থানে ধারণ করা তাদের পারস্পরিক দায়িত্বের অংশ। আমাদের জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষা, যথাযথ ব্যবহার ও তার রক্ষণাবেক্ষণ যেমন এদেশের প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব তেমনি এদেশের মাটিতে বিদেশি যেকোন রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শনের কিছু সংবিধিবদ্ধ ও নৈতিক ভিত্তি রয়েছে যা লংঘন করে কোন ভিনদেশি জাতীয় পতাকা ব্যবহার বা প্রদর্শন করা দেশীয় আইন ও নীতিবিরুদ্ধ কাজ। জাতীয় পতাকা একটি দেশের মালিকানা ও নিজস্ব প্রতীক নির্দেশ করে। যেখানে তা প্রদর্শিত হয় বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তা ঐ দেশের ভৌগলিক ও কূটনৈতিক সীমানার অধীন তথা ঐ রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে গণ্য হয় যেখানে সংশ্লিষ্ট দেশের সংবিধানসহ সমুদয় আইনের প্রয়োগ চলে এবং ঐ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের কর্তৃত্ব সেখানে প্রতিষ্ঠিত আছে মর্মে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বলে গণ্য করা হয়।
বিপুল জনপ্রিয় এই খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের মাটিতে বিদেশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন যে কোনক্রমেই সম্ভব নয়, সে বিষয়ে আমরা কতটা সচেতন?
Category: খেলাধুলা
0 মন্তব্য(গুলি)